অধ্যায় ১৪

1 এর মধ্যে হাজার হাজার লোক সমবেত হয়ে একজন অন্যের উপর পড়তে লাগল, তখন তিনি তাঁর শিষ্যদের বলতে লাগলেন, "তোমরা ফরীশীদের খামির/সম্পর্ক থেকে সাবধান থাক, তা ভণ্ডামি। 2 কিন্তু, এমন ঢাকা কিছুই নাই, যা প্রকাশ পাবে না এবং এমন গোপন কিছুই নাই, যা জানা যাবে না। 3 অতএব তোমরা অন্ধকারে যা কিছু বলিয়াছ, তা আলোতে শুনা যাবে এবং কোন গোপন জায়গায় কানে কানে যা বলিয়াছ, তা ছাদের উপরে প্রচারিত হবে। 4 আর, হে আমার বন্ধুরা, আমি তোমাদের বলছি, যাহারা শরীর বধ করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না, তাদের ভয় করিও না। 5 তবে কাকে ভয় করবে, তাহা বলিয়া দিই, বধ করে নরকে ফেলার যাঁর ক্ষমতা আছে, তাহাকেই ভয় কর। 6 পাঁচটি চড়াই পাখি কি দুই পয়সায় বিক্রি হয় না? আর তাদের মধ্যে একটিও ঈশ্বরের চোখের আড়ালে থাকে না। 7 এমনকি, তোমাদের মাথার চুলগুলিও সব হিসাব আছে। ভয় কর না, তোমরা অনেক চড়াই পাখির বেশি মূল্যবান ।" 8 আর আমি তোমাদের বলছি, "যে কেউ লোকদের সামনে আমাকে স্বীকার করে, মনুষ্যপুত্রও ঈশ্বরের দূতদের সামনে তাকে স্বীকার করবেন। 9 কিন্তু যে কেউ মানুষদের সামনে আমাকে অস্বীকার করে, ঈশ্বরের দূতদের সামনে তাকে অস্বীকার করা হবে। 10 আর যে কেউ মনুষ্যপুত্রের বিপক্ষে কথা বলে, সে ক্ষমা পাবে, কিন্তু যে কেউ ঈশ্বরনিন্দা করে, সে ক্ষমা পাবে না। 11 আর লোকে যখন তোমাদের সমাজঘরে এবং কর্তৃপক্ষ ও শাসনকর্তা দের কাছে নিয়ে যাবে, তখন কীভাবে কি উত্তর দিবে, অথবা কি বলবে, সে বিষয়ে ভাবিত হইও না, 12 কেননা কি বলা উচিত, তা পবিত্র আত্মা সেই সময়ে তোমাদের শিক্ষা দেবেন।" 13 পরে লোকেদের মধ্য থেকে এক লোক তাঁহাকে বলল, "হে গুরু, আমার ভাইকে বলুন, যেন আমার সাথে পৈতৃক ধন ভাগ করে।" 14 কিন্তু তিনি তাকে বললেন, "তোমাদের উপরে বিচারকর্তা বা বিভাগ কর্তা করে আমাকে কে নিযুক্ত করিয়াছে?" 15 পরে তিনি তাদের বললেন, "সাবধান, সকল লোভ থেকে নিজেদের রক্ষা কর, কারণ মানুষের ধন সম্পত্তি অধিক হলেও তা তার জীবন হয় না।" 16 আর তিনি তাদের এই গল্প বললেন, "একজন ধনীর জমিতে অনেক শস্য উৎপন্ন হয়েছিল। 17 তাতে সে, মনে মনে চিন্তা করতে লাগল, কি করি? আমার তো শস্য রাখার জায়গা নাই। 18 পরে বলল, "আমি এমন করব, আমার গোলাঘরগুলো ভেঙে বড় বড় গোলাঘর তৈরি করব এবং তার মধ্যে আমার সব শস্য ও আমার অন্য জিনিস রাখব। 19 আর নিজের প্রাণকে বলব, প্রাণ, অনেক বছরের জন্য, তোমার জন্য অনেক জিনিস জমা আছে, বিশ্রাম কর, খাও, পান কর ও আনন্দে মেতে থাক।" 20 কিন্তু ঈশ্বর তাকে বললেন, "হে বোকা, আজ রাতেই তোমার প্রাণ তোমার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হবে, তবে তুমি এই যে আয়োজন করলে, এসব কার হবে?" 21 যে কেউ নিজের জন্য ধন জমা করে সে ঈশ্বরের কাছে ধনবান নয়, তার অবস্থা এমনই হয়।" 22 পরে তিনি তাঁর শিষ্যদের বললেন, "এই জন্য আমি তোমাদের বলছি, ‘কি খাবার খাব’ বলে জীবনের বিষয়ে, কিংবা ‘কি পরব’ বলে দেহের বিষয়ে ভাবিও না। 23 কারণ খাবার থেকে জীবন ও কাপরের থেকে দেহ বড় বিষয়। 24 কাকদের বিষয় ভাবো, তারা বোনেও না, কাটেও না, তাদের ভান্ডারও নেই, গোলাঘরও নেই, কিন্তু ঈশ্বর তাদেরও খাবার দিয়ে থাকেন। আর পাখিদের থেকেও তোমরা কত বেশি মূল্যবান! 25 আর তোমাদের মধ্যে কে ভাবে যে নিজের বয়স এক হাত বড় করতে পারে? 26 অতএব তোমরা এত ছোট কাজও যদি করতে না পার, তবে অন্য অন্য বিষয়ে কেন ভাবিত হও? 27 লিলি ফুলের বিষয়ে ভাবো , সেগুলি কেমন বাড়ে, সেগুলি কোন পরিশ্রম করে না, সুতোও কাটে না, কিন্তু আমি তোমাদেরকে বলছি, শলোমনও তাঁর সব প্রতিপত্তি/সয় সম্পদ এদের একটির মতোও নিজেকে সাজাতে পারেননি। 28 ভাল, মাঠের যে ঘাস আজ আছে তা কাল আগুনে পুরে দেওয়া হবে, তা যদি ঈশ্বর এমন সুন্দর করে সাজিয়েছেন, তবে হে কম বিশ্বাসীরা, তোমাদের কত বেশি করে অবষ্যই সাজাবেন! 29 আর, কি খাবে, কি পান করবে, এ বিষয়ে তোমরা ভেবো না এবং চেষ্ঠাও কর না, 30 কারণ জগতের জাতিগন এসব জিনিস পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়, কিন্তু তোমাদের পিতা ঈশ্বর জানেন যে, এই সকল খাবার তোমাদের প্রয়োজন আছে। 31 তোমরা বরং তার রাজ্যর বিষয়ে ভাবিত হও, তাহলে এই সকল তোমাদের দেওয়া হবে। 32 হে ছোট্ট মেষপাল, ভয় করিও না, কারণ তোমাদের সেই রাজ্য দিতে তোমাদের পিতা ঈশ্বর পরিকল্পনা করেছেন। 33 তোমাদের যা আছে, বিক্রি করে দান কর। নিজেদের জন্য এমন থলি তৈরি কর, যা কখনো পুরনো হবে না, স্বর্গে এমন ধন জমা কর যা কখনো শেষ হবে না, যেখানে চোর আসে না, 34 এবং পোকাও নষ্ট করে না, কারণ যেখানে তোমাতদর ধন, সেখানে তোমাদের মনও থাকিবে। 35 তোমাদের কোমর বেঁধে রাখ ও বাতি ধরিয়ে রাখ। 36 তোমরা এমন লোকের মতো হও, যারা তাদের প্রভুর আসায় থাকে যে, তিনি বিয়ের ভোজ থেকে কখন ফিরে আসবেন, যেন তিনি এসে দরজায় আঘাত করলে তাহারা তখনই তাঁহার জন্য দরজা খুলে দিতে পারে। 37 যাদেরকে প্রভু এসে জেগে থাকতে দেখবেন, সেই দাসেরা ধন্য । আমি তোমাদেরকে সত্যি বলছি, তিনি কোমর বেঁধে তাদেরকে খেতে বসাবেন এবং কাছে এসে তাদের সেবা করবেন। 38 যদি মাঝ রাতে অথবা, যদি শেষ রাতে এসে প্রভু তেমনিই দেখেন, তবে দাসেরা ধন্য! 39 কিন্তু এটা জানে রাখো চোর কোন সময়ে আসবে, তা যদি বাড়ির মালিক জানিত, তবে সে জেগে থাকিত, নিজের বাড়িতে সিঁধ কাটতে দিত না। 40 তোমরাও প্রস্তুত থাক, কারণ যে সময় তোমরা মনে করবে তিনি আসবেন না, সেই সময়ই মানুষ্যপুত্র আসবেন।" 41 তখন পিতর বললেন, "প্রভু, আপনি কি আমাদের, না সবাইকে এই গল্প বলছেন?" 42 প্রভু বললেন, "সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান মালিক কে, যাকে তার প্রভু তাঁর অন্য দাসদের উপরে নির্বাচন করবেন, যেন সে তাদের সঠিক সময়ে খাবারের নিরূপিত অংশ দেয়? 43 ধন্য সেই দাস, যাকে তার প্রভু এসে তেমন করতে দেখবেন। 44 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তিনি তাকে তাঁর সব কিছুর উপরে র্নিবাচন করবেন। 45 কিন্তু সেই দাস যদি মনে মনে বলে, আমার প্রভুর আসতে দেরি হবে এবং সে দাস দাসীদেরকে মারধর করে, ভোজন ও পান করতে এবং মাতাল হতে আরম্ভ করে, 46 তবে যে দিন সে অপেক্ষা করবে না এবং যে সময়ের আশা সে করবে না ,সেই দিন ও সেই সময় সেই দাসের প্রভু আসবেন, আর তাকে দুই টুকরা করে ভন্ডদের মধ্যে তার জায়গা ঠিক করবেন। 47 আর সেই দাস, যে তার প্রভুর ইচ্ছা জেনেও তৈরি হয়নি, ও তাঁর ইচ্ছা মতো কাজ করে নি, সে বেশি শাস্তি পাবে। 48 কিন্তু যে না জেনে শাস্তির কাজ করেছে, সে কম শাস্তি পাবে। আর যে কোন লোককে বেশি দেওয়া হয়েছে, তার কাছে বেশি দাবী করা হবে এবং লোকে যার কাছে বেশি রেখেছে, তার কাছে বেশি চাওয়া হবে। 49 আমি পৃথিবীতে আগুন নিক্ষেপ করতে এসেছি, আর এখন যদি তা প্রজ্বলিত হয়ে থাকে, তবে আর কি চাই? 50 কিন্তু আমাকে এক বাপ্তিষ্মের বাপ্তিষ্ম নিতে হবে, আর তা যাবৎ সম্পুর্ণ না হয়, তাবৎ আমি কতই না হয়রান হচ্ছি। 51 তোমরা কি মনে কর, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে এসেছি? তোমাদেরকে বলছি, তা নয়, বরং বিভেদ। 52 কারণ এখন থেকে এক বাড়িতে পাঁচ জন আলাদা হবে, তিনজন দুইজনের বিপক্ষে ও দুই জন তিন জনের বিপক্ষে, 53 বাবা ছেলের বিপক্ষে এবং ছেলে বাবার বিপক্ষে, মায়ের সাথে মেয়ের এবং মেয়ের সাথে মায়ের, শাশুড়ীর সাথে বৌমার এবং বৌয়ের সাথে শাশুড়ির দন্দ সৃষ্ঠি করতে এসেছি। 54 আর তিনি লোকদের বললেন, তোমরা যখন পশ্চিমদিকে মেঘ উঠতে দেখ, তখন বল যে বৃষ্টি আসছে, আর তেমনটাই ঘটে। 55 আর যখন দক্ষিণের বাতাস বইতে দেখ, তখন বল আজ খুব গরম পড়বে এবং তাই ঘটে। 56 শয়তানেরা তোমরা পৃথিবীর ও আকাশের ভাব দেখে বিচার করতে পার, কিন্তু এই বর্তমান সময়ের অবস্থা বুঝতে পার না, এ কেমন? 57 আর সত্য কি, তা নিজেরাই কেন বিচার কর না? 58 যখন বিপক্ষের সাথে বিচারকের কাছে যাও, পথে তার সাথে মিটমাট করে নাও, না হলে যদি সে তোমাকে বিচারকের কাছে টেনে নিয়ে যায়, আর বিচারক তোমাকে সৈন্যদের হাতে ধরিয়ে দেবে, এবং সৈন্য তোমাকে জেলখানায় নিয়ে যাবে। 59 আমি তোমাকে বলছি, যে পর্যন্ত না তুমি শেষ পয়সাটা শোধ করবে, সেই পর্যন্ত তুমি কোন মতেই সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।"