123
১ ঈসা জৈতুন পাহাড়ে চলে গিয়েছিলেন। ২ খুব সকালে তিনি আবার বাইতুল মোকাদ্দেসে ফিরলেন, তখন সব মানুষেরা তাঁর কাছে আসল এবং তিনি তাদেরকে নিয়ে বসে শিক্ষা দিতে লাগলেন। ৩ আলেম ও ফরীশীরা জেনা করেছে এমন একজন স্ত্রীলোককে ধরে তাঁর কাছে আনলো ও তাদের মাঝখানে দাঁড় করালো।
456
৪ তারপর তারা বলল, ” হুজুর, এই স্ত্রীলোকটী জেনা করে ধরা পড়েছে। ৫ মুসা (আঃ) এর শরিয়তে এই রকম গুনাহগারকে পাথর মেরে হত্যা করার বিধান তিনি আমাদের দিয়েছেন; একই অপরাধে আপনার বিধান কি ?” ৬ তারা তাঁর পরীক্ষা নেবার জন্য এই কথা বললো, যেন তাঁকে দোষ দেবার কোন কারণ খুঁজে পায়। কিন্তু ঈসা মাথা নিচু করে আঙ্গুল দিয়ে মাটিতে লিখতে লাগলেন।
78
৭ যখন তারা বারবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লাগল, তখন তিনি মাথা তুলে তাদেরকে বললেন" তোমাদের মধ্যে যার কোনো গুনাহ নেই, তাকেই প্রথমে তার উপরে পাথর মারতে বল।” ৮ এরপর তিনি আবার মাথা নিচু করে তাঁর আঙ্গুল দিয়ে মাটিতে লিখতে লাগলেন।
91011
৯ তারা এই কথা শোনার পর, তাদের বুড়ো থেকে শুরু করে এক এক করে সবাই চলে গেল, ঈসা কেবল একাই রইলেন আর সেই স্ত্রীলোকটী তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিল। ১০ ঈসা তখন মাথা তুলে বললেন, ”হে নারী, তারা কোথায়? কেউ কি তোমাকে শাস্তির উপযুক্ত মনে করে নি?” ১১ স্ত্রীলোকটি জবাব দিল, ”না হুজুর, কেউই করে নি।” তখন ঈসা বললেন, ”আমিও তোমাকে গুনাহগার মনে করছি না। যাও, আর গুনাহ করো না।”
1213
১২ পরে ঈসা আবার লোকদের বললেন, তিনি বললেন, "আমিই দুনিয়ার নূর; যে আমার শরিয়তে চলে সে কখনো গুনাহে পরবে না কিন্তু জীবনের নূর পাবে।” ১৩ এতে ফরীশীরা ঈসাকে বললো, ”তোমার সাক্ষ্য সত্যি নয়, কারণ তুমি নিজের পক্ষে নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছ।”
141516
১৪ ঈসা তাদের জবাবে বললেন, "যদিও আমি নিজের পক্ষে নিজেই সাক্ষ্য দেই তবুও আমার সাক্ষ্য সত্যি। কারণ আমি কোথা থেকে এসেছি আর কোথায় বা যাব তা জানি; কিন্তু তোমরা জানো না আমি কোথা থেকে আসেছি বা কোথায় যাব। ১৫ তোমরা তোমাদের মতো করে বিচার করছো কিন্ত আমি করি না। ১৬ অবশ্য আমি যদি বিচার করি তবে আমার বিচার সত্যি কারণ আমি একা নই, বরং আমার মাবুদ সঙ্গে আছেন যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন।
1718
১৭ হ্যা, তোমাদের শরিয়তেও লেখা আছে যে, যদি দুই জন মানুষের সাক্ষ্য একই হয় তবে তা সত্যি। ১৮ আমিই সেই ব্যাক্তি যে নিজেই নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দেই আর যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন সেই পিতাও আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেন।”
1920
১৯ ফরীশীরা তাঁকে বললো, ”তোমার পিতা কোথায়?” ঈসা জবাব দিলেন, "তোমরা আমাকে চিন না আর আমার পিতাকেও চিন না; যদি তোমরা আমাকে চিনতে তবে আমার পিতাকেও চিনতে পারতে।” ২০ বায়তুল মোকাদ্দেসে শিক্ষা দেবার সময়ে দান দেবার জায়গায় ঈসা এসব কথা বললেন কিন্ত তখনও তাঁর সময় হয়নি বলে কেউ তাঁকে ধরল না।
2122
২১ ঈসা তাই আবারো ফরীশীদের বললেন, "আমি চলে যাচ্ছি, তোমরা আমাকে খোঁজ করবে এবং তোমাদের গুনাহে মরবে। আমি যেখানে যাচ্ছি তোমরা সেখানে আসতে পারবে না"। ২২ ইহূদি নেতারা তখন জানতে চাইল , ”সে আত্মহত্যা করবে না কি? কারণ সে বলছে, ”আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে তোমরা আসতে পারবে না?”
2324
২৩ ঈসা তাদেরকে বললেন, আমি এসেছি বেহেশত থেকে আর তোমরা এসেছো এই জমিন থেকে, তোমরা এই জগতের কিন্তু আমি এই জগতের নই। ২৪ তাই আমি তোমাদের বলেছি, তোমরা তোমাদের গুনাহে মরবে। তোমরা যতক্ষণ না বিশ্বাস করবে আমিই সেই মসিহ, তাহলে তোমরা তোমাদের গুনাহেই মরবে।
252627
২৫ এতে নেতারা ঈসাকে জিজ্ঞেস করলো, ”তুমি কে?” তিনি তাদেরকে বললেন, "প্রথম থেকে আমি তোমাদের যা বলছি আমি তা-ই।” ২৬ তোমাদের সম্বন্ধে বলবার ও বিচার করে দেখবার জন্য আমার কাছে অনেক বিষয়ই আছে। যাহোক, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনি সত্য এবং আমি তাঁর কাছ থেকে যা শুনেছি সেই সবই আমি জগতে বলছি।” ২৭ তিনি তাদেরকে পিতার সমন্ধে বলছিলেন তা তারা বুঝতে পারে নি।
282930
২৮ এজন্য ঈসা বললেন, ”যখন তোমরা মরিয়মপুত্রকে ক্রূশে তুলবে তখন তোমরা জানতে পারবে যে আমিই তিনি, যেনে রাখ আমি নিজে থেকে কিছুই করি না, বরং পিতা আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন আমি সেই সব কথাই বলি। ২৯ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনিই আমার সঙ্গে আছেন এবং তিনি আমাকে একা ছেড়ে দেননি, কারণ তিনি যে কাজে সন্তুষ্ট হন সব সময় আমি সেই কাজই করি।” ৩০ ঈসা যখন এই সব কথা বলছিলেন তখন অনেকেই তাঁর উপরে ঈমান আনল।
313233
৩১ যে ইহূদিরা তাঁর উপরে ঈমান এনেছিল ঈসা তাঁদের বললেন, "যদি তোমরা আমার কথা মেনে চল, তাহলে তোমরা সত্যিই আমার উম্মত; ৩২ তখন তোমরা সত্য জানতে পারবে ও সেই সত্যই তোমাদের নাজাত করবে।” ৩৩ তারা তাঁকে উত্তর দিল, আমরা অব্রাহামের বংশের লোক এবং কখনও কারও গোলাম হইনি; আপনি কেমন করে বলছেন যে, ”তোমাদের নাজাত করা হবে?”
343536
৩৪ ঈসা তাঁদের জবাব দিলেন, ”সত্যি, আমি তোমাদের সত্যিই বলছি , যারা গুনাহে পরে থাকে তাাঁরা সবাই গুনাহের গোলাম। ৩৫ গোলাম চিরকাল বাড়িতে থাকে না কিন্তু পুত্র চিরকাল থাকে। ৩৬ তাই পুত্র যদি তোমাদের নাজাত করে তবে তোমরা সত্যিই রক্ষা পাবে।
3738
৩৭ আমি জানি তোমরা ইব্রাহিমের বংশের লোক; তবুও তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাইছো, কারণ আমার কথা তোমরা বিশ্বাস করতে পারছো না। ৩৮আমি আমার পিতার কাছে যা দেখেছি সেই বিষয়েই বলি; আর তোমরা তোমাদের পিতার কাছ থেকে যা শুনেছ, তা-ই করে থাক।”
394041
৩৯ এতে সেই ইহুদী নেতারা ঈসাকে বলল, ”ইব্রাহিমই আমাদের পিতা।” ঈসা তাদেরকে বললেন, "যদি তোমরা ইব্রাহিমের সন্তান হতে, তবে তোমরা ইব্রাহিমের মতোই কাজ করতে। ৪০ আল্লাহর কাছ থেকে আমি যে সত্য জেনেছি তা-ই তোমাদেরকে বলেছি, আর তবুও তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাইছো। কিন্ত ইব্রাহিম এইরকম ছিলেন না। ৪১ তোমরা তোমাদের পিতারই কাজ করো। ”তাঁরা ঈসাকে বলল, আমরা তো জারজ নই; আমাদের একজনই পিতা আছেন, তিনি আল্লাহ।”
424344
৪২ ঈসা তাঁদের বললেন, ”সত্যি যদি আল্লাহ তোমাদের পিতা হতেন, তবে তোমরা আমাকে মহব্বত করতে, কারণ আমি আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আর এখন তোমাদের মধ্যে আছি; আর আমি নিজ থেকে আসিনি বরং তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন। ৪৩ তোমরা কেন আমার কথা বুঝতে পার না? তার কারণ হলো, তোমরা আমার কথা মন দিয়ে শুন না। ৪৪ ইবলিসই তোমাদের পিতা আর তোমরা তারই সন্তান, সেজন্য তোমরা তার ইচ্ছা পূরণ করতে চাও। ইবলিস প্রথম থেকেই খুনি এবং সে সত্যের পক্ষে থাকে না কারণ তার মধ্যে কোনো সত্য নেই। সে যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন সে নিজের স্বভাব থেকেই বলে কারণ সে মিথ্যাবাদী এবং সমস্ত মিথ্যার জন্ম তাঁর মাধ্যমেই হয়েছে।
454647
৪৫ অথচ আমি সত্য কথা বলি বলে তোমরা আমাকে বিশ্বাস কর না। ৪৬ তোমাদের মধ্যে কে আমাকে গুনাহগার বলে প্রমাণ করতে পারে? যদি আমি সত্যকথা বলি, তবে কেন তোমরা আমার উপরে ঈমান আনছো না? ৪৭ "যে আল্লাহর সে আল্লাহর সব কথা শোনে; তোমরা আল্লাহর নও তাই আল্লাহর কথা শোন না।
4849
৪৮ ইহূদি নেতারা জবাব দিল, আমরা কি সত্য বলিনি যে তুমি একজন শমরীয় এবং তোমাকে ভূতে ধরেছে? ৪৯ জবাবে ঈসা বললেন, "আমাকে ভূতে ধরেনি কিন্তু আমি আমার পিতাকে সম্মান করি, অথচ তোমরা আমাকে অসম্মান কর।
5051
৫০ আমি আমার নিজের প্রশংসার চেষ্টা করি না; কিন্ত একজন আছেন যিনি আমাকে সন্মান দান করেন আর তিনিই বিচারকর্তা। ৫১ সত্যি, সত্যিই আমি তোমাদের বলছি, যদি কেউ আমার উপরে ঈমান আনে, তবে সে কখনও মরবে না।”
5253
৫২ ইহূদি নেতারা তাঁকে বলল, ”এবার আমরা সত্যিই বুঝলাম যে, তোমাকে ভূতেই ধরেছে। ইব্রাহিম ও নবীরা মারা গেছেন; অথচ তুমি বলছ, যদি কেউ আমার উপরে ঈমান আনে সে কখনও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে না।” ৫৩ তুমি আমাদের পূর্বপুরুষ ইব্রাহিম থেকেও মহান নও যিনি মারা গেছেন, তাই না? নবীরাও মারা গেছেন। তুমি নিজেকে কি মনে কর?”
545556
৫৪ জবাবে ঈসা বললেন, ”যদি আমি নিজের প্রশংসা নিজেই করি,তবে তার কোন দাম নেই ; আমার পিতা, যাঁকে তোমরা তোমাদের আল্লাহ বলে দাবি করো তিনিই আমাকে সন্মান দান করেন। ৫৫ তোমরা তাঁকে জান না; কিন্তু আমি তাঁকে জানি। যদি আমি বলি, ’তাঁকে জানি না,’ তবে তোমাদের মত আমিও একজন মিথ্যাবাদী হব। কিন্ত আমি তাঁকে জানি এবং তাঁর কথা মেনেও চলি। ৫৬ তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আমারই দিন দেখবার আশায় আনন্দ করেছিলেন; তিনি তা দেখেছিলেন আর খুশীও হয়েছিলেন।”
575859
৫৭ তখন ইহূদি নেতারা তাঁকে বলল, ”তোমার বয়স এখনও পঞ্চাশ বছর হয়নি, আর তুমি ইব্রাহিমকে কি দেখেছ?” ৫৮ ইসা তাঁদের বললেন, সত্য, সত্যই, আমি তোমাদেরকে বলছি, ইব্রাহিম জন্মগ্রহন করবার আগে থেকেই আমি আছি।” ৫৯ এই কথা শুনে সেই নেতারা তাঁকে মারবার জন্য পাথর তুলে নিল কিন্তু ঈসা লুকিয়ে বাইতুল-মোকাদ্দেস থেকে বের হয়ে গেলেন।