অধ্যায় ১৪ 6

1 2 3 1এই সব কিছুর পরে যীশু গালীল সাগরের যাকে তিবিরিয়া- সাগরও বলে, তার অপর পারে চলে গেলেন। 2আর বহু মানুষ তাঁর পিছনে পিছনে যেতে লাগল, কারণ তিনি অসুস্থদের উপরে যে সব চিহ্ন- কাজ করতেন সে সব তারা দেখত। 3যীশু পর্বতের উপর উঠলেন এবং সেখানে নিজের শিষ্যদের সঙ্গে বসলেন। 4 5 6 4তখন নিস্তারপর্ব্ব, ইহূদিদের এই পর্ব্ব খুব কাছেই এসেছিল। 5যখন যীশু তাকালেন এবং দেখলেন যে বহু মানুষ তাঁর কাছে আসছে তখন তিনি ফিলিপকে বললেন, এদের খাবারের জন্য আমরা কোথায় রুটি কিনতে যাব? 6আর এই সব তিনি ফিলিপকে পরীক্ষা করার জন্য বললেন, কারণ তা তিনি নিজে জানতেন কি করবেন। 7 8 9 7ফিলিপ তাঁকে উত্তর দিলেন, ওদের জন্য দুশো দিনারের রুটি ও যথেষ্ট নয় যে, প্রত্যেকে এমনকি অল্প করে পাবে। 8তাঁর শিষ্যদের মধ্যে একজন শিমোন পিতরের ভাই আন্দ্রিয় যীশুকে বললেন, 9এখানে একটি বালক আছে যার কাছে যবের পাঁচটি রুটি এবং দুটী মাছ আছে কিন্তু এত মানুষের মধ্যে এইগুলি দিয়ে কি হবে? 10 11 12 10যীশু বললেন, "লোকদের বসিয়ে দাও"। সেই জায়গায় অনেক ঘাস ছিল। সুতরাং পুরুষেরা বসে গেল, সংখ্যায় প্রায় পাঁচ হাজার লোক হবে। 11তখন যীশু সেই রুটি কয়টি নিলেন এবং ধন্যবাদ দিয়ে যারা বসেছিল তাদেরকে ভাগ করে দিলেন; সেইভাবে মাছ কয়টিও তারা যতটা চেয়েছিল ততটা দিলেন। 12আর তারা তৃপ্ত করে খাবার পর তিনি নিজের শিষ্যদের বললেন, অবশিষ্ট গুঁড়াগাঁড়া সব জড়ো কর, যেন কিছুই নষ্ট না হয়। 13 14 15 13সুতরাং তাঁরা জড়ো করলেন এবং ঐ পাঁচটি যবের রুটি র গুঁড়াগাঁড়ায় সেই মানুষদের খাবার পর যা বেঁচেছিল তাতে বারো ঝুড়ি ভরলেন। 14তখন সেই মানুষেরা তাঁর আশ্চর্য্য কাজ দেখে বলতে লাগল, ইনি সত্যই সেই ভাববাদী যাঁর পৃথিবীতে আসার কথা আছে। 15যখন যীশু বুঝতে পারলেন যে, তারা এসে রাজা করবার জন্য জোর করে তাঁকে ধরতে আসছে, তাই তিনি আবার নিজে একাই পর্বতে চলে গেলেন। যীশু জলের উপর হাঁটলেন। 16 17 18 16যখন সন্ধ্যা হলো তাঁর শিষ্যেরা সমুদ্রতীরে চলে গেলেন। 17তারা একটি নৌকায় উঠলেন এবং সমুদ্রের অপর পারে কফরনাহূমের দিকে চলতে লাগলেন। সে সময় অন্ধকার হয়ে এসেছিল এবং যীশু তখনও তাঁদের কাছে আসেননি। 18সেই সময় ঝড় হচ্ছিল এবং সাগরে বড় বড় ঢেউ উঠছিল। 19 20 21 19এইভাবে যখন শিষ্যেরা দেড় বা দুই ক্রোশ বয়ে গেলেন তাঁরা যীশুকে দেখতে পেলেন যে তিনি সমুদ্রের উপর দিয়ে হেঁটে নৌকার কাছে আসছেন এতে তাঁরা ভয় পেলেন। 20তখন তিনি তাঁদেরকে বললেন, "এ আমি, ভয় কর না"। 21তখন তাঁরা তাঁকে নৌকায় নিতে রাজি হলেন এবং তাঁরা যেখানে যাচ্ছিলেন নৌকা তক্ষনি সেই ডাঙা জায়গায় পৌঁছে গেল। 22 23 22পরের দিন, সাগরের অপর পারে যেখানে মানুষের দল দাঁড়িয়েছিল তারা দেখেছিল যে সেখানে একটি ছাড়া আর কোনো নৌকা নেই এবং যীশু শিষ্যদের সঙ্গে সেই নৌকায় ওঠেন নি কেবল তাঁর শিষ্যেরা চলে গিয়েছিলেন। 23যদিও সেখানে কিছু নৌকা ছিল যা তিবিরিয়া থেকে এসেছিল যেখানে প্রভু ধন্যবাদ দেবার পর মানুষেরা রুটি খেয়েছিল। 24 25 24যখন মানুষের দল দেখল যে, না যীশু না শিষ্যেরা কেউই সেখানে নেই, তখন তারা সেই সব নৌকায় চড়ে যীশুর খোঁজ করতে কফরনাহূমে গেল। যীশু জীবনের রুটি । 25সাগরের অপর পারে তাঁকে পাওয়ার পর তারা বলল, রব্বি, আপনি এখানে কখন এসেছেন? 26 27 26যীশু তাদেরকে উত্তর দিলেন, বললেন, সত্য সত্যই, আমি তোমাদের বলছি, তোমরা আশ্চর্য্য কাজ দেখেছ বলে আমার খোঁজ করছ তা নয় কিন্তু সেই রুটি খেয়েছিলে ও তৃপ্ত হয়েছিলে বলে। 27যে খাবার নষ্ট হয়ে যায় তার জন্য কাজ করো না, কিন্তু সেই খাবারের জন্য কাজ কর যেটা অনন্ত জীবন পর্যন্ত থাকে যা মানবপুত্র তোমাদের দেবেন, কারণ পিতা ঈশ্বর কেবল তাঁকেই মুদ্রাঙ্কিত করেছেন। 28 29 28তখন তারা তাঁকে বলল, আমরা যেন ঈশ্বরের কাজ করতে পারি, এ জন্য আমাদের কি করতে হবে? 29যীশু উত্তর দিয়ে বললেন, ঈশ্বরের কাজ এই যে, যেন তাঁতে তোমরা বিশ্বাস কর যাকে তিনি পাঠিয়েছেন। 30 31 30সুতরাং তারা তাঁকে বলল, আপনি এমনকি আশ্চর্য্য কাজ করবেন যা দেখে আমরা আপনাকে বিশ্বাস করব? আপনি কি করবেন? 31আমাদের পূর্বপুরুষেরা মরূপ্রান্তে গিয়ে মান্না খেয়েছিলেন, যেমন লেখা আছে, “তিনি খাবার জন্য তাদেরকে স্বর্গ থেকে রুটি দিলেন।” 32 33 34 32যীশু তাদেরকে বললেন, সত্য, সত্যই আমি তোমাদেরকে বলছি, মোশি তোমাদেরকে স্বর্গ থেকে তো সেই রুটি দেননি, কিন্তু আমার পিতাই তোমাদের কে স্বর্গ থেকে প্রকৃত রুটি দিচ্ছেন। 33কারণ ঈশ্বরীয় রুটি হলো যা স্বর্গ থেকে নেমে আসে এবং পৃথিবীর মানুষকে জীবন দেন। 34সুতরাং তারা তাঁকে বলল, প্রভু, সেই রুটি সবসময় আমাদের দিন। 35 36 37 35যীশু তাদের বললেন, আমিই হলাম সেই জীবনের রুটি । যে আমার কাছে আসে তার আর খিদে হবে না এবং যে আমার উপর বিশ্বাস করে তার আর কখনো পিপাসা পাবে না। 36যদিও আমি তোমাদের বলেছি যে, তোমরা আমাকে দেখেছ এবং এখনো বিশ্বাস কর না। 37পিতা যে সব আমাকে দেন সে সব আমার কাছেই আসবে এবং যে আমার কাছে আসবে তাকে আমি কোন ভাবেই বাইরে ফেলে দেবো না। 38 39 40 38কারণ আমি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছি আমার ইচ্ছা পূরণ করার জন্য নয় কিন্তু তাঁরই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন। 39এবং যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর ইচ্ছা হলো যে তিনি আমাকে যে যাদের দিয়েছেন, তার কিছুই যেন না হারাই, কিন্তু শেষ দিনে যেন তাদের জীবিত করে তুলি। 40কারণ আমার পিতার ইচ্ছা হলো, যে কেউ পুত্রকে দেখে এবং তাঁতে বিশ্বাস করে সে যেন অনন্ত জীবন পায় এবং আমিই তাকে শেষ দিনে জীবিত করব। 41 42 41তখন ইহূদি নেতারা তাঁর সম্পর্কে বকবক করতে লাগল, কারণ তিনি বলেছিলেন, "আমিই সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে"। 42তারা বলল, এ যোষেফের পুত্র সেই যীশু নয় কি, যার পিতা মাতাকে আমরা জানি? এখন সে কেমন করে বলে, আমি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছি? 43 44 45 43যীশু উত্তর দিয়ে তাদেরকে বললেন, তোমরা নিজেদের মধ্যে বকবক করা বন্ধ কর। 44কেউ আমার কাছে আসতে পারবে না যতক্ষণ না পিতা যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন ও তিনি আকর্ষণ করছেন, আর আমি তাকে শেষ দিনে জীবিত করে তুলবো। 45ভাববাদীদের বইতে লেখা আছে, “তারা সবাই ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাবে।” যে কেউ পিতার কাছে শুনে শিক্ষা পেয়েছে, সেই আমার কাছে আসে। 46 47 46কেউ যে পিতাকে দেখেছে তা নয়, শুধুমাত্র যিনি ঈশ্বর থেকে এসেছেন কেবল তিনিই পিতাকে দেখেছেন। 47সত্য, সত্যই বলছি যে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পায়। 48 49 48আমিই জীবনের রুটি । 49তোমাদের পূর্বপুরুষেরা মরূপ্রান্তে মান্না খেয়েছিল এবং তারা মরে গিয়েছে। 50 51 50এই হলো সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে যেন মানুষেরা এর কিছুটা খায় এবং না মরে। 51আমিই সেই জীবন্ত রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। কেউ যদি এই রুটি র কিছুটা খায় তবে সে চিরকাল জীবিত থাকবে। আমি যে রুটি দেব সেটা আমার মাংস, পৃথিবীর মানুষের জীবনের জন্য। 52 53 52ইহূদিরা খুব রেগে গেল ও একে অপরের সঙ্গে তর্ক করে বলতে লাগলো, কেমন করে ইনি আমাদেরকে খাবার জন্য নিজের মাংস দেবে? 53যীশু তাদেরকে বললেন, সত্য, সত্যই আমি তোমাদের বলছি, যতক্ষণ না তোমরা মানবপুত্রের মাংস খাবে ও তাঁর রক্ত পান করবে তোমাদের নিজেদের জীবন পাবে না। 54 55 56 54যে আমার মাংস খায় ও আমার রক্ত পান করে সে অনন্ত জীবন পেয়েছে এবং আমি তাকে শেষ দিনে জীবিত করব। 55কারণ আমার মাংস সত্য খাবার এবং আমার রক্তই প্রকৃত পানীয়। 56যে কেউ আমার মাংস খায় ও আমার রক্ত পান করে সে আমার মধ্যে থাকে এবং আমি তার মধ্যে থাকি। 57 58 59 57যেমন জীবন্ত পিতা আমাকে পাঠিয়েছেন এবং পিতার জন্যই আমি বেঁচে আছি, ঠিক সেইভাবে যে কেউ আমাকে খায়, সেও আমার মাধ্যমে জীবিত থাকবে। 58এই হলো সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে, পূর্বপুরুষেরা যেমন খেয়েছিল এবং মরেছিল সেই রকম নয়। এই রুটি যে খাবে সে সে চিরকাল বেঁচে থাকবে। 59যীশু এই সব কথা কফরনাহূমে সমাজঘরে উপদেশ দেবার সময় বললেন। মরূপ্রান্তে যীশুর সঙ্গে শিষ্য। 60 61 60তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অনেকে এই কথা শুনে বলল, এইগুলি কঠিন উপদেশ, কে এইগুলি গ্রহণ করবে? 61তাঁর শিষ্যেরা এই নিয়ে তর্ক করছে যীশু তা নিজে অন্তরে জানতে পেরে তাদের বললেন, "এই কথায় কি তোমরা বিরক্ত হচ্ছ"? 62 63 62তখন কি ভাববে? যখন মানবপুত্র আগে যেখানে ছিলেন সেখানে তোমরা তাঁকে উঠে যেতে দেখবে? 63পবিত্র আত্মা জীবন দেন, মাংস কিছু উপকার দেয় না। আমি তোমাদের যে সব কথা বলেছি তা হলো আত্মা এবং জীবন। 64 65 64এখনও তোমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা বিশ্বাস করে না। কারণ যীশু প্রথম থেকে জানতেন কারা বিশ্বাস করে না এবং কেই বা তাঁকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দেবে। 65তিনি বললেন, এই জন্য আমি তোমাদেরকে বলেছি, যতক্ষণ না পিতার কাছ থেকে ক্ষমতা দেওয়া হয়, কেউ আমার কাছে আসতে পারে না। 66 67 68 69 66এই সবের পরে তাঁর অনেক শিষ্য ফিরে গেল এবং তাঁর সঙ্গে আর তারা চলাফেরা করল না। 67তখন যীশু সেই বারো জনকে বললেন, তোমরাও কি দূরে চলে যেতে চাও? 68শিমোন পিতর তাঁকে উত্তর দিলেন, প্রভু, কার কাছে আমরা যাব? আপনার কাছে অনন্ত জীবনের বাক্য আছে; 69এবং আমরা বিশ্বাস করেছি ও জেনেছি যে আপনি হলেন ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি। 70 71 70যীশু তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের এই যে বারো জনকে কি আমি মনোনীত করে নিই নি? এবং তোমাদের মধ্যে একজন শয়তান আছে। 71এই কথা তিনি ঈষ্করিয়োতীয় শিমোনের পুত্র যিহূদার সমন্ধে বললেন, কারণ সে সেই বারো জনের মধ্যে একজন ছিল যে তাঁকে বেইমানি করে ধরিয়ে দেবে।