12
১ লাসার নামে একজন লোক খুবই অসুস্থ ছিলেন, তিনি বৈথনিয়া গ্রামের দুই বোন মরিয়ম ও মার্থার ভাই ছিলেন। ২ ইনি সেই মরিয়ম যিনি হযরতের পায়ে আতর মাখিয়ে দেন এবং নিজের মাথার চুল দিয়ে হযরতের পা মুছে দেন, তাঁরই ভাই লাসার অসুস্থ ছিলেন।
34
৩ বোনেরা ঈসাকে বলে পাঠালেন, ”হযরত, দেখুন, আপনি যাকে মহব্বত করেন সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।” ৪ ঈসা এই কথা শুনলেন, তিনি বললেন, ”এই অসুস্থতা মৃত্যুর জন্য হয়নি, কিন্তু মাবুদের মহিমার জন্য হয়েছে যেন ইবনুল্লাহ এর দ্বারা মহিমান্বিত হন।”
567
৫ মার্থা ও তাঁর বোন এবং লাসারকে ঈসা মহব্বত করতেন। ৬ তাই লাসারের অসুস্থতার খবর শোনার পর, তিনি যে জায়গায় সফরে ছিলেন সেখানে আরও দুই দিন থাকলেন। ৭ এরপর তিনি সাহাবীদের বললেন, "চল আমরা আবার এহূদিয়াতে যাই।”
89
৮ সাহাবীরা তাঁকে বললেন, ”হুজুর, এই সেদিনই তো ইহূদিরা আপনাকে পাথর মারতে চেয়েছিল, আর আপনি আবারো সেখানে যাবেন?” ৯ ঈসা জবাব দিলেন, ”একদিনে কি বারো ঘন্টা আলো থাকে না?” যদি কেউ দিনের বেলা হাঁটে, সে হোঁচট খাবে না, কারণ সে দিনের অলোতে সব দেখে।
1011
১০ তবে, যদি সে রাতে হাঁটে, সে হোঁচট খাবে কারণ তখন আলো থাকে না।” ১১ তিনি এই সব কথা বললেন, এবং এই সব কিছু বলার পরে, তিনি তাঁদেরকে বললেন, ”আমাদের বন্ধু লাসার ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু আমি যাচ্ছি যেন তাকে ঘুম থেকে জাগাতে পারি।”
121314
১২ তখন সাহাবীরা তাঁকে বললেন, ”হযরত, সে যদি ঘুমিয়েই থাকে, তবে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।” ১৩ এখানে ঈসা তাঁর মৃত্যুর কথা বলেছিলেন, কিন্তু তাঁরা মনে করেছিলেন যে, তিনি স্বাভাবিক ঘুমের কথাই বলেছেন। ১৪ এরপরে ঈসা স্পষ্টভাবে তাঁদেরকে বললেন, ”লাসার মারা গেছে।”
1516
১৫ আমি আনন্দিত, তোমাদের জন্য, আমি সেখানে ছিলাম না যাতে তোমরা বিশ্বাস কর। এখন চল আমরা তার কাছে যাই। ১৬ থোমা, যাকে যমজ বলা হতো, তার সঙ্গী সাহাবীদের বললেন, ”চল আমরাও যাই যেন ঈসার সঙ্গে মরতে পারি।”
17181920
১৭ ঈসা যখন আসলেন, তিনি শুনলেন যে, লাসারকে চার দিন আগে দাফন করা হয়েছে। ১৮ বৈথনিয়া জেরুজালেমের কাছেই ছিল, দুরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। ১৯ ইহূদিদের মধ্য থেকে অনেকেই মার্থা ও মরিয়মের কাছে এসেছিল, তাঁদের ভাইয়ের জন্য সান্ত্বনা দিতে। ২০ তখন মার্থা, যখন সে শুনল যে ঈসা আসিতেছেন, তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু মরিয়ম ঘরেই বসে ছিলেন।
212223
২১ মার্থা তখন ঈসাকে বললেন, ”প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকতেন, আমার ভাই হয়ত মরত না। ২২ তবে এখনও, আমি জানি যে, আপনি আল্লাহর কাছে যা কিছু চাইবেন, আল্লাহ তা আপনাকে দেবেন।” ২৩ ঈসা তাঁকে বললেন, ”তোমার ভাই আবার উঠবে।”
242526
২৪ মার্থা তাঁকে বললেন, ”আমি জানি যে শেষের দিনে পুনরুত্থানে সে আবার উঠবে।” ২৫ ঈসা তাঁকে বললেন, ”আমিই পুনরুত্থান ও জীবন; যে আমার উপরে ঈমান আনে, যদি সে মরেও, জীবন পাবে; ২৬ এবং যে বেঁচে আছে এবং আমার উপরে ঈমান আনে সে কখনও মরবে না। তোমার কি এই কথার উপর ঈমান আছে?”
272829
২৭ তিনি তাঁকে বললেন, ”হ্যাঁ, হযরত, আমি ঈমান এনেছি যে আপনিই সেই মসিহ, ইবনুল্লাহ, যিনি এই দুনিয়ায় এসেছেন।” ২৮ যখন তিনি কথাগুলো বললেন, তিনি চলে গেলেন এবং তার নিজের বোন মরিয়মকে গোপনে ডাকলেন। তিনি বললেন, ”হুজুর এখানে এসেছেন এবং তোমাকে ডাকছেন।” ২৯ যখন তিনি এটি শুনলেন, তিনি তাড়াতাড়ি উঠে তার কাছে গেলেন।
303132
৩০ ঈসা তখনও গ্রামে প্রবেশ করেননি কিন্তু যেখানে মার্থা তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন সেই জায়গাতেই ছিলেন। ৩১ তখন যে ইহূদিরা, তার সঙ্গে ঘরের মধ্যে ছিল ও তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল, তারা দেখলো মরিয়ম তাড়াতাড়ি উঠে বাইরে চলে গেলেন, তারাও তাঁর পিছু নিল, তারা মনে করলো তিনি কবরের কাছে কাঁদতে যাচ্ছেন। ৩২ যখন মরিয়ম যেখানে ঈসা ছিলেন সেখানে আসলেন, তখন তাঁকে দেখে তাঁর পায়ে পড়ে বললেন, ”হযরত, আপনি যদি এখানে থাকতেন, আমার ভাই মরত না।”
333435
৩৩ ঈসা যখন দেখলেন তিনি কাঁদছেন, ও তাঁর সঙ্গে যে ইহূদিরা এসেছিল তারাও কাঁদছে, তখন আত্মায় খুব অস্থির হয়ে উঠলেন ও উদ্বিগ্ন হলেন; ৩৪ তিনি বললেন "তোমরা তাকে কোথায় দাফন করেছো ?" তাঁরা তাঁকে বললেন, ”হযরত, এসে দেখুন।” ৩৫ ঈসা কাঁদলেন।
3637
৩৬ তখন ইহূদিরা বলল, ”দেখ তিনি লাসারকে কতটা মহব্বত করতেন !” ৩৭ কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, ”এই মানুষটি কি পারতেন না, যে ব্যাক্তি অন্ধের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন, একই ভাবে মানুষটিকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে?”
383940
৩৮ এতে ঈসা আবারো, মনে মনে অস্থির হয়ে, কবরের কাছে গেলেন। সেই কবর একটা গুহা ছিল, এবং তার উপরে একটা পাথর দেওয়া ছিল। ৩৯ ঈসা বললেন, "তোমরা পাথরটা সরিয়ে ফেল।” মার্থা, মৃত লাসারের বোন, ঈসাকে বললেন, ”হযরত, এতক্ষণে ওর দেহ পঁচে দুর্গন্ধ হয়ে গেছে, কারণ সে মারা গেছে চার দিন হয়েছে।” ৪০ ঈসা তাঁকে বললেন, "আমি কি তোমাকে বলিনি যে, যদি তুমি ঈমান আনো, তবে মাবুদের কুদরত দেখতে পাবে?"
4142
৪১ তাই তারা পাথরটি সরিয়ে ফেললো। ঈসা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ”পিতা, আমি তোমার শুকরিয়া আদায় করি যে, তুমি আমার কথা শুনেছ। ৪২ আমি জানতাম তুমি সবসময় আমার কথা শোন, কিন্তু এই যে সব মানুষের দল আমার চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে এদের জন্য এই কথা বললাম, যেন তারা বিশ্বাস করে যে তুমিই আমাকে পাঠিয়েছ।”
4344
৪৩এই সব বলার পরে, তিনি চিৎকার করে ডেকে বললেন, ”লাসার, বাইরে এস।” ৪৪ তাতে সেই মৃত মানুষটি বেরিয়ে আসলেন; তাঁর পা ও হাত কবর কাপড়ে জড়ানো ছিল, এবং তার মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। ঈসা তাদেরকে বললেন, "তাকে খুলে দাও এবং যেতে দাও।"
4546
৪৫ তখন ইহূদিদের অনেকে যারা মরিয়মের কাছে এসেছিল এবং দেখেছিল ঈসা যা করেছিলেন, তাঁতে উপস্থিত সবাই ঈমান আনলো। ৪৬ কিন্তু তাদের কয়েকজন ফরীশীদের কাছে ছুটে গেল এবং ঈসা যা কিছু করেছিলেন তাদেরকে তার সবই বলল।
4748
৪৭ তখন প্রধান ইমামগণ ও ফরীশীরা মহাসভা করে বলতে লাগল, ”আমরা এখন কি করব?” এ মানুষটি তো অনেক অলৌকিক কাজ করছে। ৪৮ আমরা যদি তাঁকে এইভাবে চলতে দিই, তবে সবাই তার উপরেই ঈমান আনবে; তখন রোমীয়েরা আসবে এবং আমাদের দেশ ও জাতি উভয়ই কেড়ে নেবে।”
4950
৪৯ যাহোক, তাদের মধ্যে একজন ক্ষমতাশালী ব্যাক্তি, কাইয়াফা, যিনি সেই বছরের মহা-ইমাম ছিলেন, তাদেরকে বললেন, ”তোমরা কিছুই জানো না। ৫০ আর ভেবেও দেখ না যে সমগ্র জাতি ধ্বংস হওয়ার চেয়ে মানুষের জন্য একজন মানুষের মৃত্যু তোমাদের জন্য ভালো।”
515253
৫১ এই সব কথা তিনি নিজের থেকে বললেন নি, বরং, তিনি ছিলেন সেই বৎসরের মহা-ইমাম, তিনি ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন যে, ঈসা জাতির জন্য মৃত্যুবরন করবেন। ৫২ আর শুধুমাত্র সেই জাতির জন্য নয় বরং যাতে আল্লাহর সন্তানরা যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তারা একত্রিত হয়।। ৫৩ তাই সেই দিন থেকে তারা ঈসাকে কীভাবে হত্যা করা যায় তার পরিকল্পনা করেছিল।
5455
৫৪ তখন থেকে ঈসা আর খোলাখুলি ভাবে ইহূদিদের মধ্যে চলাফেরা করতেন না, আর সেখান থেকে দূরে মরূপ্রান্তের কাছে এক নিরাপদ জায়গা আফরাহীম নামক শহরে গেলেন। সেখানে তিনি তার সাহাবীদের নিয়ে থাকতেন। ৫৫ তখন ইহূদিদের উদ্ধার-ঈদ কাছে এসেছিল, এবং অসংখ্য মানুষ নিজেদেরকে পাক-সাফ করবার জন্য উদ্ধার-ঈদের আগে দেশের সমস্ত এলাকা থেকে জেরুজালেমে গিয়েছিল।
5657
৫৬ তারা ঈসার খোঁজ করছিলেন, এবং বায়তুল-মোকাদ্দসে দাঁড়িয়ে একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো, ”তোমরা কি ধারণা কর? তিনি কি এই ঈদে আসবেন না?” ৫৭ আর তখন প্রধান ইমাম ও ফরীশীরা হুকুম দিয়েছিল যে, যদি কেউ জানে ঈসা কোথায় আছেন, সে যেন খবর দেয় যেন তারা তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে।